মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ
থার্মাল ক্যামেরা কি করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারে?

থার্মাল ক্যামেরা কি করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারে?

স্বদেশ ডেস্ক:

পৃথিবীর নানা প্রান্তে লকডাউন শিথিল করার সঙ্গে সঙ্গে জনস্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন স্থানে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার ব্যবহার বাড়তে দেখা যাচ্ছে। থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা কাজ করে ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এই ক্যামেরা শরীরের তাপ ধরতে পারে। সাধারণত কপালের তাপমাত্রা এই ক্যামেরা নেয় এবং তার থেকে শরীরের সার্বিক তাপমাত্রা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়।

থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরার কাজ কী?

এই তাপমাত্রা নির্ণায়ক ক্যামেরা খুবই শক্তিশালী। দমকল বাহিনীতে প্রায়ই এই ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়, কোথায় আগুন আছে তাপমাত্রা মেপে তা বোঝার জন্য। পুলিশও অনেক সময় কোনো সন্দেহভাজন অপরাধীকে ধরতে এই ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকে। যখন কোনো মানুষকে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু মানুষের তাপমাত্রা দিয়ে চোখের আড়ালে মানুষ আছে কি না, তা তারা বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাজে লাগানোর জন্য এই ক্যামেরা তৈরি করা হয়নি। কাজেই বর্তমান করোনাভাইরাস মহামারিতে তা কতটা কার্যকর হতে পারে?

এই ক্যামেরা শরীরের তাপমাত্রার একটা মোটামুটি নির্ভরযোগ্য রিডিং দিতে পারে, যা প্রকৃত তাপমাত্রার আধা ডিগ্রি এদিক-সেদিক হতে পারে। কিন্তু তারপরও এই ক্যামেরা শরীরের যে তাপমাত্রা রেকর্ড করে তা চিকিৎসকরা যেটাকে শরীরের তাপমাত্রা হিসেবে দেখেন, সেটা নয়। এ বিষয়ে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেরেক হিল বিবিসিকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য সাধারণত যে থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়, এটা সেভাবে শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নেয় না।’

শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত?

মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৮.৬ ফারেনহাইট)। শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে সেটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং তখন জ্বর হয়েছে বলে ধরা হয়। তবে মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে এবং দিনের বিভিন্ন সময়ে তা বদলাতে পারে। ঋতুমতী মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় এই তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে।

শরীরের সঠিক তাপমাত্রা নির্ধারণ করা খুব সহজ নয়। কপাল থেকে, মুখ বা কানের ভেতর অথবা বগলের নিচে তাপমাত্রা নেওয়া হয়। তবে ডাক্তারদের মতে সবচেয়ে সঠিক রিডিং পাওয়া যায় পায়ু থেকে তাপমাত্রা মাপলে।

থার্মাল ক্যামেরা কি করোনাভাইরাস ধরতে পারে?

না, থার্মাল ক্যামেরার কাজ হচ্ছে শুধু শরীরের তাপমাত্রা মাপা। আমরা জানি, করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলে জ্বর বেশি হয়। অন্য উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে বমিভাব, মাথাব্যথা, অবসাদ বা ক্লান্তি এবং স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়া। কিন্তু সবার যে আবার জ্বরের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাও নয়। আবার বেশি জ্বর হয়েছে এমন ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ নাও হতে পারে। ফলে শুধু থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করলেই যে সংক্রমিত ব্যক্তিদের ধরা যাবে তা নয়। কারণ জ্বর না থাকলেও কারও অন্য উপসর্গ থাকতে পারে অথবা এমন হতে পারে কারও কোনো উপসর্গই নেই, কিন্তু তিনি ভাইরাস বহন করছেন।

অথবা এই ক্যামেরা এমন কারও শরীরে বেশি তাপমাত্রা পেতে পারে, যার তাপমাত্রা বাড়ার অন্য কারণ থাকতে পারে, অর্থাৎ এটা পজিটিভ বলে তাকে শনাক্ত করলে তা বিভ্রান্তিমূলক হবে।

তাহলে থার্মাল ক্যামেরার উপযোগিতা কী?

শুধু তাপমাত্রা মাপলে সেটা ‘করোনা শনাক্তের একটা কার্যকর পদ্ধতি নাও হতে পারে’ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এখানে ক্যামেরা সঠিকভাবে সেট করতে হবে এবং যে ব্যক্তির তাপমাত্রা নেওয়া হচ্ছে, মনে রাখতে হবে তার আশপাশের পরিবেশের তাপমাত্রাও সেখানে রেকর্ড হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার ‘অনেক সরঞ্জাম আছে, এটা তার মধ্যে একটি’, বলছেন ইংল্যান্ডের রেডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস ফেরিম্যান।

ব্যায়াম করলে কি শরীরের তাপমাত্রা বাড়বে?

সাধারণত না। ব্যায়াম করার সময় যেহেতু ত্বকের ওপর ঘাম হয়, তাই চামড়ার তাপমাত্রা এ সময় নেমে যায়। ব্যায়ামের পর শরীর দক্ষতার সঙ্গেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই শরীরের তাপমাত্রা খুবই অস্বাভাবিক দেখালে ব্যায়ামের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক আছে কী না তা ভাবা যেতে পারে।

আর কীভাবে তাপমাত্রা মাপা যাবে?

পোর্টেবল থার্মোমিটার ব্যবহার করে, যেখানে কপাল লক্ষ্য করে তাপমাত্রা নেওয়া হয়। এই থার্মোমিটার ত্বক স্পর্শ করে না, তবে কয়েক সেন্টিমিটার দূর থেকে এই থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা নেওয়া যায়। অধ্যাপক হিল বলছেন, ‘পায়ুপথে তাপমাত্রা নেওয়ার সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে এই হাতে ধরা থার্মোমিটারে মাপা তাপমাত্রা জ্বর নির্ধারণে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক রিডিং দিয়েছে।’

এদিকে কোনো কোনো নৌবন্দরে বিদেশগামী জাহাজে যাত্রী তোলার আগে এই থার্মাল ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের সেখানে এই পরীক্ষার ফলাফল জানানো হচ্ছে না। লকডাউনের পর খোলা ইংল্যান্ডের কিছু স্কুলে হাতে ধরা লেজার থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক কর্মস্থলেও কর্মীদের তাপমাত্রা পরীক্ষায় থার্মাল ক্যামেরার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে থার্মাল ক্যামেরা দিয়ে তাপমাত্রা মাপার বিষয়টি বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার প্রবণতা থেকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু এতে দূরত্ব রেখে শরীরের তাপমাত্রা নেওয়া হয়, তাই এর ফলাফল বা রিডিং সবসময় সঠিক নাও হতে পারে আর করোনার বিস্তার ঠেকানোর জন্য শুধু এই পদ্ধতির ওপর নির্ভর করাটাও সমীচিন হবে না বলেই তাদের মতো।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877